কুরসী হলো আল্লাহর দুটি পা রাখার স্থান:
আমরা দ্বিতীয় পর্বে বিস্তারিত প্রমাণসহ আলোচনা করেছি যে, বর্তমানের সালাফী আকিদার উৎস হলো ইহুদীদের আকিদা। এই কথাটি সালাফী আকিদার ক্ষেত্রে দিনের আলোর মতো সত্য। যারা সালাফীদের মৌলিক আকিদার কিতাব পড়েছেন, তাদের কারও কাছে বিষয়টি গোপন নয়। সাধারণ মানুষের সামনে তারা সহীহ আকিদার ঢেকুর তুললেও তাদের মৌলিক কিতাবে ইহুদী-খ্রিষ্টানদের আকিদাগুলোই বর্ণনা করা হয়েছে। এমন সব জঘন্য আকিদা বর্ণনা করা হযেছে, যার সাথে ইসলামী আকিদার কোন সম্পর্ক নেই। এসব আকিদা ইসলামীকরণের জন্য বিভিন্ন জাল ও দুর্বল বর্ণনার সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। অধিকাংশ জাল ও জয়ীফ বর্ণনা ইহুদীদের কাছ থেকে নেয়া। ইহুদীদের কাছ থেকে নেয়া সালাফীদের একটি আকিদা হলো, কুরসী হলো আল্লাহর উভয় পা রাখার স্থান। এর মাধ্যমে প্রথমে তারা নাউযুবিল্লাহ আল্লাহর জন্য দু’টি পা সাব্যস্ত করেছে। এরপর আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দিয়ে সেগুলোর জন্য রাখার কথা বলেছে। এবং আল্লাহর উভয় পা রাখার জন্য কুরসীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। আমরা যে সূরা ইখলাসে পড়েছি, আল্লাহ তায়ালা অমুখাপেক্ষী, অথচ এদের বক্তব্য হলো, আল্লাহ তায়ালা কুরসীর উপর পা রাখেন। অর্থাৎ তিনি পা রাখার জন্য কুরসীর সহযোগিতা নেন। নাউযুবিল্লাহ। এধরনের জঘন্য সব আকিদা আল্লাহর জন্য তারা সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে হেফাজত করুন।
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
সালাফী শায়খ ইবনে উসাইমিন তার লমুয়াতুল ই’তেকাদ কিতাবের ব্যাখ্যায় লিখেছে,
” কুরসী আরশ থেকে ভিন্ন। কেননা আরশ হলো, যার উপর আল্লাহ তায়ালা স্থির হয়েছেন। আর কুরসী হলো আল্লাহর উভয় পা রাখার স্থান”
[শরহু লুময়াতিল ই’তেকাদ, পৃ.৬৪]
স্ক্রিনশট:
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
সালাফী শায়খ সালেহ আল-ফাউজান আকিদাতুত ত্বহাবীর উপর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা লিখেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন, আত-তা’লীকাতুল মুখতাসারা। তিনি এ কিতাবে লিখেছেন,
” কুরসী হলো আরশের নীচে। আর একটি আছার বর্ণিত হয়েছে যে, কুরসী হলো আল্লাহর উভয় পা রাখার স্থান”
[আত-তা’লীকাতুল মুখতাসারা আলাল আকিদাতিত ত্বহাবিয়্যা, পৃ.১২৪]
স্ত্রিনশট:
আব্দুল আজিজ রাজেহীর বক্তব্য:
শায়খ আব্দুল আজিজ রাজেহী আকিদাতুত ত্বহাবীর একটি ব্যাখ্যা লিখেছেন। তার ব্যাখ্যার নাম হলো, আল-হিদায়াতুর রব্বানিয়া ফি শরহিল আকিদাতিত ত্বহাবীয়া। আব্দুল আজিজ রাজেহী লিখেছেন,
” সঠিক কথা হলো, কুরসী হলো আরশ ব্যতীত অন্য একটি সৃষ্টি। এটি আল্লাহর উভয় পা রাখার স্থান”
[আল-হিদায়াতুর রব্বানিয়া, পৃ.৩৯৬]
স্ক্রিনশট:
আব্দুর রহমান ইবনে নাসের আল-বাররাক এর বক্তব্য:
শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসের আল-বাররাক আকিদাতুত ত্বহাবীর একটি ব্যাখ্যা লিখেছেন। তার কিতাবের নাম হলো, শরহু আকিদাতিত ত্বহাবিয়্যা|। এ কিতাবে তিনি লিখেছেন,
” আহলে সুন্নতের প্রসিদ্ধ বক্তব্য হলো, কুরসী হলো আল্লাহর একটি বড় মাখলুক। এটি আল্লাহর উভয় পা রাখার স্থান”
[শরহুল আকিদাতিত ত্বহাবিয়্যা, পৃ.১৯০]
স্ত্রিনশট:
শায়খদের স্ববিরোধী বক্তব্যসমূহ:
ইবনে বাজের বক্তব্য: সম্ভবত এটি ইহুদী বর্ণনা
শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ আকিদাতুত ত্বহাবীর একটি ব্যাখ্যা লিখেছে। তিনি এর নাম দিয়েছেন আত-তা’লীকাতুল বাজিয়া। এ কিতাবে ইবনে বাজ লিখেছেন,
” ইবনে আব্বাস রা. এ বক্তব্যটি ইহুদীদের কিতাব থেকে গ্রহণ করেছেন। কেননা, কুরসী আল্লাহর উভয় পা রাখার স্থান, এটি বলার জন্য রাসূল স. এর স্পষ্ট বক্তব্য প্রয়োজন, যেখানে ভিন্ন সম্ভাবনার অবকাশ থাকবে না। ইবনে আব্বাস রা. এর এ বক্তব্যটি সম্ভাবনাময়। কেননা, এটি বনী ইসরাইলদের বর্ণনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তিনি হয়তো রাসূল স. থেকে এটি শোনেননি। কেননা, অকাট্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ আরশের উপরে রয়েছেন। আর কুরসী হলো, একটি সমুদ্রের নীচে। এই সমুদ্রের উপরে আরশ অবস্থিত। সুতরাং কুরসী আল্লাহর পা রাখার স্থান, এটি প্রমাণের জন্য স্পষ্ট বক্তব্য প্রয়োজন। নতুবা এটি বিতর্কের উর্ধ্বে নয়। সম্ভাবনা রয়েছে, এটি একটি ইসরাইলী (ইহুদী) বর্ণনা”
[আত-তা’লিকাতুল বাজিয়া, পৃ.৬০৫]
স্ত্রিনশট:
শায়খ আলবানীর বক্তব্য: সম্ভবত এটি ইহুদী বর্ণনা
শায়খ আলবানী কুরসী আল্লাহর পা রাখার স্থান সম্পর্কে লিখেছে,
” সম্ভাবনা রয়েছে, এটি একটি ইসরাইলী বা ইহুদীদের বর্ণনা”
[মাউসুআতুল আলবানী, পৃ.৩১২]
স্ত্রিনশট:
আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইহুদীদের আকিদা থেকে হেফাজত করুন।
নোট: পূর্বে আকিদাতুত ত্বহাবীর ব্যাখ্যা লেখার কথা কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকে হয়তো আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন যে, সালাফী শায়খরা আকিদাতুত ত্বহাবীর উপর এতো ব্যাখ্যা কেন লেখে?
আসলে সালাফী শায়খরা ইমাম ত্বহাবীর বক্তব্য ব্যাখ্যার জন্য এটার উপর বিশ্লেষণী কিতাব লেখে না। বরং এদের ব্যাখ্যা লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো, ইমাম ত্বাহাবীর আকিদা খন্ডন করে নিজেদের বাতিল আকিদা এর মাঝে প্রবেশ করানো, ইমাম ত্বহাবীর বক্তব্যের বিকৃত ব্যাখ্যা করা এবং নিজেদের বাতিল আকিদাসমূহকে আকিদাতুত ত্বহাবীর ব্যাখ্যার নামে সমাজে প্রচার করা। সালাফীদের লেখা আকিদাতুত ত্বাহাবীর একটি ব্যাখ্যার সাথেও ইমাম ত্বহাবী রহ. এর দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। এগুলোকে ব্যাখ্যা না বলে, ইমাম ত্বাহাবীর আকিদা বিকৃতির কিতাব বলা যেতে পারে। ইবনে আবিল ইয থেকে শুরু করে সালাফীদের যারাই এর ব্যাখ্যা করেছে, সবাই একই কাজ করেছে। ইবনে বাজ, আলবানীসহ সব সালাফীই একই পথের অনুসারী। নিজেদের ভ্রান্ত আকিদা সমাজে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আকিদাতুত ত্বাহাবীর ব্যাখ্যার নাম দিয়েছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সবধরনের ধোকা থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন।
সালাফী শায়খের জঘন্য উক্তি:
বর্তমান সালাফী আকিদার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দেহবাদী আকিদা লক্ষ্য করা যায়। এর একটি বাস্তব ও প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হলো, কুরসীর উপর পা রাখার আকিদাটি। সালাফী উসামা আল-কাসসাস ইসবাতু উলুবিল্লাহ নামে একটি কিতাব লিখেছে। এ কিতাবে সে তার জঘন্য দেহবাদী আকিদার বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে। সে লিখেছে,
” কুরসী হলো আল্লাহর উভয় পা রাখার স্থান। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তার উভয় পা কুরসীর উপর রাখেন এবং আরশের উপর বসেন বা স্থির হন”
স্ক্রিনশট:
এর চেয়ে স্পষ্ট দেহবাদী আকিদা আর কী হতে পারে? আল্লাহ পাক আমাদেরকে সহীহ আকিদার নামে প্রচারিত সকল ভ্রান্ত আকিদা থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।
Leave a Reply