শরীয়তের যেসব মাসআলায় গবেষণার সুযোগ রয়েছে এগুলোকে ইজতিহাদী মাসআলা বলে। ইজতিহাদী মাসআলাগুলো নিয়েই মূলত: মতবিরোধ হয়ে থাকে। মতবিরোধপূণর্ ইজতিহাদী মাসআলার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সত্য কোনটি, তা বের করার তিন’টি পদ্ধতি রয়েছে।
১. আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সতে্যর ব্যাপারে ফয়সালা আসা। যেমন বদর যুদ্ধের বন্দীদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সত্যটি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
২.সরাসরি রাসূল স.কে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া।
৩. মুসলিম উম্মাহের মাঝে ইজমা সংগঠিত হওয়া। কারণ রাসূল স. বলেছেন, আমার উম্মত ভ্রষ্টতার উপর একমত হবে না।
Month: June 2016
শায়খের মুরীদ: শায়খ অনেক পেরেশানীতে আছি!
শায়খ: কেন? কী হয়েছে?
মুরীদ: আপনি বলেছেন, মাজহাব ছেড়ে কুরআন-হাদীসের উপর আমল করতে। আমি মাজহাব ছাড়ার চেষ্টা করলেও মাজহাব আমার পিছু ছাড়ছে না। যে মাসআলায় আমল করছি, মাজহাবের ভেতরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনভাবেই মাজহাব ছাড়তে পারছি না। কোন মাসআলায় অনেক চেষ্টার পরেও যদি বের হই, তাহলে সেটা বিদয়াত হয়ে যাচ্ছে। বিদয়াত না হলেও কিছু কিছু আলেম বলছেন এগুলো ভুল। বহু চেষ্টা করে হাতটা নাভীর নীচ থেকে বুকের উপরের অংশে আনলাম। কিন্তু ড.বকর আবু যায়েদ বলে দিলেন, এটা না কি নতুন সৃষ্টি। এখন কি শায়খ মাথার উপর হাত বাধবো? বহু চেষ্টা করে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে নামায পড়া শুরু করলাম। কিছু দিন পরে দেখালাম ইবনে বাজ ও ইবনে ইসাইমিন রহ. এর বিরোধীতা করেছেন। মাজহাব ছাড়তেও পারছি না। আবার ছাড়লেও সেটা না কি ঠিক হচ্ছে না। কী বিপদ বলুন তো শায়খ?
শায়খ: কে কী বললো, তুমি সেসব দেখো কেন? সরাসরি কুরআন-হাদীস মানো। আমরা ইবনে তাইমিয়াকেও মানি না, ইবনে বাজকেও মানি না। আমরা সরাসরি কুরআন হাদীস মানি।
মুরীদ : এই খানেই তো বিপত্তি শায়খ। কুরআনের আয়াতগুলো বিভিন্ন অথর্ রাখে। কুরু শব্দের অথর্ হায়েজ। আবার কুরু মানেই পবিত্রতা। এভাবে কুরআন থেকে মাসআলা বুঝতে গিয়েই তো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে যে বই-ই পড়ছি, সেখানে এসব মাজহাবী ইমামদের কথা রয়েছে।
শায়খ: তুমি এখনোও কামেল মুজতাহিদ হতে পারোনি। পরিপূণর্ মুজতাহিদ হলে এসব সমস্যা থাকবে না।
মুরীদ: পরিপূণর্ মুজতাহিদ কীভাবে হবো। সমস্যা তো শায়খ এখানেই শেষ নয়। হাদীস মানতে গিয়ে দেখি হাদীসের কতো শ্রেণি বিভাগ। একজন একটাকে সহীহ বলছে, অপরজন সেটাকেই জয়ীফ বলছে। একজন জাল বলছে, আরেকজন কেমনে কেমনে সেটাকেই সহীহ বানিয়ে দিচ্ছে। এবার তাহলে আমাকে কামেল মুজতাহিদ হওয়ার পথ বলে দেন?
শায়খ: তোমার পছন্দ অনুযায়ী একটাকে গ্রহণ করবা। আর বলবা, এটাই একমাত্র শরীয়ত। এটাই বিশুদ্ধ। এর বাইরে যা আছে সব বাতিল। ব্যাস। তুমি কামেল হয়ে গেলে।
মুরীদ : অন্যরা যদি আমার বিরোধীতা করে?
শায়খ : করলে করুক। তুমি নিজেকে সব সময় হকের উপর মনে করবা। অত্যন্ত কনফিডেন্সের সাথে বলবা তোমারটাই সঠিক।
মুরীদ : ঠিক বলেছেন শায়খ। আত্মতৃপ্তি অনেক বড় গুণ। কামেল মুজতাহিদ হলে এটা অজর্িত হবে। যদিও মাজহাবীরা এখনও কামেল মুজতাহিদ হয়নি। অন্যদেরটাও সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে। তবে আমরা কিন্তু একমাত্র আমাদেরটাই সঠিক বলবো। একটু কনফিডেন্সের সাথে আমারটাই সত্য না বললে মানুষ তো খাবে না।
শায়খ : হুম। তাহলে তো তোমার কাছে বিষয়টা ক্লিয়ার। কুরআন হাদীস পড়বা। ইমামদের বিভিন্ন মতবিরোধ যাচাই-বাছাই করবা। এর মধে্য যেটা তোমার কাছে পছন্দনীয় ও শক্তিশালী মনে হয় সেটাকে একমাত্র শরীয়ত বলে চালিয়ে দিবা। কোন পেরেশানী থাকবে না। তোমার কথার বিপরীতে যদি ইবনে তাইমিয়া রহ. এর কথাও থাকে, তাহলে সাফ বলে দিবা, আমরা তো ইবনে তাইমিয়ার কালিমা পড়িনি। আমরা রাসূল স.এর কালিমা পড়েছি। কুরআন -হাদীসের বাইরে ইবনে তাইমিয়াও আমাদের দলিল নয়। একটা বিষয়ে সতকর্ থাকবা। তুমি যে কারও গবেষণাকে কুরআন হাদীস বলে চালিয়ে দিচ্ছো এটা কিন্তু ঘুনাক্ষরেও বুঝতে দিবা না। তাইলে কিন্তু শেষ। সব সময় নিজের গবেষণা ও পছন্দকে কুরআন – হাদীস মনে করবা।
মুরীদ: জাযাকাল্লাহ শায়খ। বহুত উমদা নুসখা বললেন। এখন তো নিজেকে অনেক হালকা লাগছে। বাসায় গিয়েই ইজতিহাদ শুরু করে দিবো।
শায়খ: আল্লাহ তোমার ইজতিহাদে বরকত দান করুন। বারাকাল্লাহু ফিক। তোমাদের দেখে আমার দিল ঠান্ডা হয়ে যায়। আহ। সমাজে কতো মুজতাহিদ বাড়ছে। আগের যুগে দু’একজন মুজতাহিদ ছিলো। তাও আবার কামেল না। এখন তো আমরা ঘরে ঘরে কামেল মুজতাহিদ তৈরি করছি। আর শোনো, আমার সম্পাদনায় বোখারীর নতুন অনুবাদ বেরিয়েছে। ওটা কিনে নিও। ইজতিহাদ করতে গেলে এরকম সহীহ দু’একটা অনুবাদ রাখার দরকার আছে।
মুরীদ : জি, শায়খ। আপনার তাহকীক করা সবগুলো বই আছে। ইজতিহাদে এগুলো প্রায়ই কাজে লাগে।
ইসলামী আকিদা বিষয়ে আব্দুল হক হক্বানী রহ. এর বিখ্যাত একটি কিতাব রয়েছে। আকাইদুল ইসলাম। এটি ১৩০২ হিজরী সালে উদুর্তে ছাপা হয়। মাতবায়ে আনসারে দিল্লী থেকে এটি প্রকাশিত হয়। কিতাবের শুরুতে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ. এর সংক্ষিপ্ত অভিমত রয়েছে। কিতাবটি সম্পকর্ে কাসেম নানুতুবী রহ. বলেন,
“উদুর্ ভাষায় এটি একটি অদ্বিতীয় কিতাব। আমি কিতাবের শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত পড়েছি। সত্য কথা হলো, উদুর্ ভাষায় ইতোপূবর্ে এধরণের কোন কিতাব লেখা হয়নি। বিষয় বস্তুর দিক থেকেও এধরনের কোন কিতাব প্রকাশিত হয়নি। কিতাবটি লেখকের গভীর পান্ডিত্যের উজ্জল সাক্ষর। প্রবাদ রয়েছে, মানুষকে তার বক্তব্য ও লেখনী থেকে চেনা যায়। অতিরিক্ত ভূমিকা লেখা অথর্হীন। পাঠক নিজেই দেখে নিন, কিতাবটি কতো অসাধারণ”।
ওসিলার ক্ষেত্রে আমাদের মূল অবস্থান
তা’বীল সম্পকর্ে…
– সালাফরা তা’বী করতেন না। এজন্য কোনভাবেই তা’বীল করা যাবে না।
– আপনার এই কথা শুনে আমার একটা আরবী প্রবাদ মনে পড়েছে। প্রবাদটা বলছি। আপনি আগে আমাকে তা’বীল কাকে বলে সংক্ষেপে একটু বলুন।
ক. শব্দের আক্ষরিক অথর্ না নেয়াকে তা’বীল বলে।
খ. আপনি তাহলে বলছেন, সালাফরা সকলে আক্ষরিক অথর্ে বিশ্বাস করতেন। আক্ষরিক অথর্ ছেড়ে অন্য কোন অথর্ নিতেন না।
ক.জি। আমি এটাই বলতে চাচ্ছি।
খ. আচ্ছা, ইয়াদ শব্দের আক্ষরিক অথর্ কী।
ক. ইয়াদ বা হাত হলো যে কোন প্রাণীর বিশেষ একটা অঙ্গ যার সাহাযে্য বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে। যেমন, মানুষের হাত। পিপড়ার হাত। হাতির হাত। এগুলো সব তাদের দেহের অংশ বা একটা বিশেষ অঙ্গ।
খ. সালাফরা আপনার এই আক্ষরিক অথর্ে বিশ্বাস রাখতেন?
ক. না.. মানে..
খ. না মানে কি। আপনি তো হা বলবেন। আপনি হাতের যেই আক্ষরিক অথর্ বললেন, সেটা সালাফরা বিশ্বাস করতেন?
ক. না। সালাফরা অঙ্গ-প্রতঙ্গ অথর্ে বিশ্বাস করতেন না।
খ. তাহলে আপনি কেন সালাফদের ব্যাপারে বললেন, তারা আক্ষরিক অথর্ে বিশ্বাস করতেন?
ক……। তবে সালাফরা তো ইয়াদকে সিফাত বলেছেন।
খ. ইয়াদের আক্ষরিক অর্থ সিফাত বা গুণ?
ক. না।
খ. তাহলে আপনি কেন বলছেন, সালাফরা আক্ষরিক অথর্ে বিশ্বাস করতেন?
ক. তারা এটাকে সিফাত বা গুণ কেন বললেন?
খ. আপনি এই প্রশ্ন করতে পারতেন কেউ কেউ একে সিফাত কেন বলেছেন, কিনন্তু আপনি কেন দাবী করলেন, সালাফরা তা’বীল করতেন না, আক্ষরিক অথর্ে বিশ্বাস করতেন? আপনার সংজ্ঞা অনুযায়ী আক্ষরিক অথর্ে বিশ্বাস না করা হলো তা’বীল। সালাফদের কেউ তো ইয়াদ বলে অংশ বা অঙ্গ উদ্দেশ্য নেয়নি। তাহলে সালাফদের কেউ ইয়াদের আক্ষরিক অথর্ে বিশ্বাস করেনি। সবাই আক্ষরিক অথর্ থেকে সরে গেছে। ফলে সবাই তা’বীল করেছে। যেহেতু আক্ষরিক অথর্ থেকে সরে যাওয়ার অথর্ই হলো তা’বীল করা। আমরা তো দেখছি, সব সালাফই তা’বীল করেছেন। অথচ আপনি বলছেন, সালাফরা তা’বীল করেননি।
ক. আচ্ছা, মেনে নিলাম সালাফরা আক্ষরিক অথর্ে বিশ্বাস করেননি। তাদের কেউ কেউ যে সিফাত বললেন?
খ. ইয়াদের আক্ষরিক অথর্ যেহেতু সিফাত বা গুণ নয়। সুতরাং কেউ যদি ইয়াদকে সিফাত বা গুণ বলে, তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে তিনি ইয়াদের তা’বীল করেছেন। কারণ আক্ষরিক অথর্ে ইয়াদ কখনও সিফাত বোঝায় না। এখন ইয়াদ বলে সিফাত উদ্দেশ্য নেয়ার অথর্ হলো, আক্ষরিক অথর্ থেকে সরে অন্য অথর্ে যাওয়া। আর এটাকেই তা’বীল বলে।
ক. আপনি বলতে চাচ্ছেন, সালাফদের কেউ কেউ যে ইয়াদকে সিফাত বলেছেন, এটাও এক ধরণের তা’বীল?
খ. অবশ্যই। এটা এক ধরণের তা’বীল নয়, বড় ধরণের তা’বীল। এবার আপনাকে আরবী প্রবাদটা শুনিয়ে দেই। ফাররা মিনাল মাতার ও কামা তাহতাল মিঝাব। বৃষ্টি থেকে বাচতে গিয়ে ঝরনার নীচে দাড়ানো। আপনি তো তা’বীল থেকে বাচতে গিয়ে বড় তা’বীলে চলে যাচ্ছেন।
ক. …..